বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ চালু না করা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কাছে জবাব জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। পশ্চিমবাংলার পাশাপাশি দিল্লি, তেলেঙ্গানা ও ওডিশার কাছেও ভারতের শীর্ষ আদালত একই উত্তর জানতে চেয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তারা কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকেও নোটিস পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ চালু না করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন হায়দরাবাদের পি শেখর রাও। সেখানে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবাংলা, ওডিশা ও দিল্লি ছাড়া সব রাজ্যেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর ফলে ওই চারটি রাজ্যের সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। কারণ, এই প্রকল্পের আওতায় করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা–সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিমা ও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় অনেক টাকা ব্যয় করে বেসরসকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই ঘটনা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা (আইনের চোখে সবাই সমান) এবং ২১ নম্বর ধারার (জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা) বিরোধী।’
সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েই থেমে যাননি পি শেখর রাও। দেশের শীর্ষ আদালতে তিনি সরাসরি আর্জি জানিয়েছেন, যে সব রাজ্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করেনি, তাদের সেই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হোক। রাও দাবি করেছেন, চারটি রাজ্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু না করে সেইসব রাজ্যের গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষকে অনেক সুযোগ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ যাতে সহজে এই চিকিৎসা পরিষেবাগুলি পায়, তাই সেই রাজ্যগুলিতে অবিলম্বে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় সরকার এবং জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে নতুন একটি প্রকল্প তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই প্রকল্পের আওতায় এই চারটি রাজ্যের মানুষ আয়ুষ্মান ভারত বা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ব্যবহারের বিকল্প পাবেন।
পি শেখর রাওয়ের আর্জি গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ বাংলা–সহ এই চারটি রাজ্যকে নোটিস দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করা হয়েছে কিনা, বা করা না হয়ে থাকলে, তার কারণ জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকেও বেঞ্চের তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নোটিসের জবাবে রাজ্য সরকার কী জানায়, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। উল্লেখ্য, পশ্চিমবাংলায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করা নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের চিঠি যাতে সাধারণ মানুষের কাছে না পৌঁছয়, সেইজন্য শাসক দলের তরফে ডাকঘরের পিয়নদের চিঠি বিলিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
সেই সময় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, আয়ুষ্মান প্রকল্পে নাকি ৮০ শতাংশ টাকাই দেয় রাজ্য। বাকি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু প্রকল্পের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব যায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছেই। তাই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প পশ্চিমবাংলায় চালু করা হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। তখন মুখ্যমন্ত্রী এমনও অভিযোগ করেন, বাংলায় আয়ুষ্মান ভারতের নাম ‘স্বাস্থ্যসাথী’ রাখা হবে বলে রাজ্যকে জানিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু পরে সেই অবস্থান থেকে সরে যায় তারা। বাড়ি বাড়ি যে কার্ড পাঠানো হয়েছিল, তাতে স্বাস্থ্যসাথীর নাম ছিল না। তাই রাজ্যে এখন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু রয়েছে।